সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
সংবাদ শিরোনাম :
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন শুক্রবার থেকে ভাতগাঁও ভমভমি বাজারে নিয়মিত গরু-ছাগলের হাট বসবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিলেন জমিয়ত নেতা সৈয়দ তামিম আহমদ দিরাইয়ে হিকমাহ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশনের শুভ উদ্বোধন আনজুমানে তাহাফফুজে দ্বীনের ক্বিরাআতের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ জমিয়তের ইতিহাসকে সমুন্নত রাখতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে: হাফিজ মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ দিরাইয়ে বজ্রপাতে হতাহত ৩ ইলম অর্জন হতে হবে প্রকৃত আমলের নিয়্যাতে: শায়খুল হাদিস বিলাল বাওয়া সুনামগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে যুবক খুন দিরাইয়ে বজ্রপাতে নিহত পরিবারের পাশে এমপি প্রার্থী রশিদ মিয়া
হু হু করে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ, নারীরাই এগিয়ে

হু হু করে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ, নারীরাই এগিয়ে

182199_1আমার সুরমা ডটকম : পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে বিবাহবিবচ্ছেদ বাড়ছে এবং সেই হার ক্রমবর্ধমান৷ ২০০৫ সালে ঢাকায় যখন একটি সিটি কর্পোরেশন ছিল, তখন বিবাহবিচ্ছেদ হয় প্রায় পাঁচ হাজার৷ আর ২০১৪ সালে শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেই এ সংখ্যা ৫,৪১৮টি৷
মিরপুরের নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি মো. আমির হোসেন ১১ বছর ধরে বিয়ে এবং তালাক রেজিস্ট্রির কাজ করছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার অভিজ্ঞতা বলছে যে, বিয়ে বিচ্ছেদের হার প্রতি বছরই বাড়ছে৷ আর এই বিচ্ছেদের আবেদনের ৭০ ভাগই আসে নারীদের কাছ থেকে৷” তিনি আরো বলেন, ‘‘একপাক্ষিক তালাকের আদেনই বেশি৷ তবে সমঝোতার ভিত্তিতেও সম্পর্ক শেষ করছেন কোনো কোনো দম্পতি৷ এছাড়া পরে সালিশে কিছু সংসার টিকলেও, তার সংখ্যা নগন্য৷”
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কাজি অফিসে তালাকের আবদেনের মধ্য দিয়ে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ এরপর সিটি কর্পোরেশন তিনমাস সময় দেয় উভয় পক্ষকে সমঝোতার জন্য৷ যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে তালাকের আবেদনের দিন থেকেই তা কার্যকর হয়৷
প্রায়ই দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী দু’জনে একসাথে বাইরে থেকে ফিরলেন৷ কিন্তু খাবার তৈরি বা সংসারের অন্য কাজে লেগে গেলেন স্ত্রী৷ আর স্বামী টিভি চালিয়ে বসলেন সোফায়৷ এমনটা না করে বরং সংসারের কাজকর্ম দু’জনে মিলেমিশে শেষ করে, পরে একসাথে দু’জন মিলে টিভি দেখুন বা গল্প করুন৷ সারাদিন কে কী করলেন একে অপরেকে জানান৷
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে এই এলাকায় ১৭ হাজার ৩৮৮টি তালাক কার্যকর হয়েছে৷ দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে তা কমপক্ষে ৩৫ হাজার৷ আর এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেও দেখা যায় যে, তালাকের আবেদনকারীদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগই নারী৷
নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. আমির হোসেন বলেন, ‘‘তালাকের আবেদনে সাধারণত মূল কারণ উল্লেখ করা হয় না৷ আইনি জটিলাতা এড়াতে কারণ হিসেবে ‘বনিবনা না হওয়ার’ কথা বলা হয়৷ তবে আসল কারণ আরো গভীর৷” তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলে জেনেছি, নারী বা পুরুষ–যেই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করুন না কেন, তাঁদের অন্যতম অভিযোগ হলো বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক৷ এছাড়া নারীরা নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগ করেন, করেন মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও৷”
রাজধানী ঢাকার এই চিত্র কি সারা দেশের? গত সাড়ে পাঁচ বছরে খুলনাতে ৬ ,৫৪৭টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে৷ খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২০১০ সালে ৯৪৬টি, ২০১১ সালে ১ হাজার ৭৪টি, ২০১২ সালে ১ হাজার ১৮১টি, ২০১৩ সালে ১ হাজার ২৫৪টি, ২০১৪ সালে ১ হাজার ৪১৯টি এবং ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ৬৭৩টি বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে৷
বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক, মনোমালিন্য, পারস্পরিক আস্থা ও নির্ভরশীলতার অভাব, ফেসবুক ও মোবাইল ফোনে অযাচিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, মাদকাসক্তি, বাড়তি অর্থনৈতিক চাহিদা ইত্যাদি উঠে এসেছে৷ এখানেও বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন নারীরাই বেশি করেছেন৷
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ পারস্পরিক আস্থা আর নির্ভরতার সংকট৷ আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এই সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷” তাঁর কথায়, ‘‘এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো নানা উপাদান৷”
এক সময় সবাইকেই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়–‘বিয়ে কবে করছো?’ এ প্রশ্ন যে কত অস্বস্তিকর, যাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় তাঁর মনে প্রশ্নটি যে কত চাপ তৈরি করে, তা কেউ ভাবেনই না৷ এ চাপ থেকে মুক্তি পেতে ফটোগ্রাফার সুজানে হাইনৎস কাপড়ের দোকানের পোশাক পরানো কিছু মূর্তি, অর্থাৎ ম্যানেকুইন্স দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের পরিবার৷ স্বামী চঙ্কি, মেয়ে মেরি মার্গারেটের সঙ্গে তাঁর ছবিটি দেখুন৷ যেন সুখী পরিবার, তাই না!
নারীরা কেন বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন বেশি করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নারীর এখন আর আগের মতো মুখ বুজে সব কিছু মেনে নিচ্ছেন না৷ তাঁরা শিক্ষা এবং অর্থনৈতিকভাবে সংহত হচ্ছেন৷ ফলে সঙ্গির অন্যায় আচরণ এবং দাবি তাঁরা এখন আর মেনে নিচ্ছে না৷ নির্যাতন গোপন করে সংসারে মুখ বুজে পড়ে থাকছেন না৷ বলা বাহুল্য, নারীরাই এই সমাজে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত৷ ফলে তাঁদের পক্ষ থেকেই আবেদন বেশি আসছে৷”
তিনি অবশ্য এ কথাও বলেন যে, ‘‘এর বাইরে নারী-পুরুষ উভয়েরই একমুখী সম্পর্কের অনিহা, নগরায়ন, বহুমাত্রিক সম্পর্ক থেকেও সংসার ভাঙছে৷ সংসার ভাঙছে আর্থিক কারণেও৷”
তিনি বলেন, ‘‘যে সব দম্পতির সন্তান আছে তাঁদের সংসার ভাঙলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সন্তানরা৷ তাদের জীবনের স্বাভাবিকতা অনেক সময়ই নষ্ট হয়ে যায়৷”
কাজি মো. আমির হোসেন তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কথা জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘একটি ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে৷ স্বামী-স্ত্রীর সমঝোতার মাধ্যমেই তালাক হয়৷ তাঁদের দু’টি শিশু সন্তানও ছিল৷ একটির বয়স আট এবং আরেকটির বয়স ছয় বছর৷ তারাও বাবা-ময়ের সঙ্গে সেদিন এসেছিল কাজি অফিসে৷ শিশু দু’টি বাবা-মাকে জড়িয়ে আমার সামনে অনেক কেঁদেছে৷ কিন্তু তারপরও তারা পারেনি তাদের বাবা-মাকে এক রাখতে৷ ওই দম্পতি সেষ পর্যন্ত তালাকের কাগজে সই করেন৷ শিশু দু’টির কথা আমার এখনো মনে পড়ে৷ জানি না তারা কেমন আছে৷”
অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের এখন অনেক কিছু মানতে হবে, বুঝতে হবে৷ অশান্তিই যদি সম্পর্কের মূল সুর হয়, সেই সম্পর্ক দীর্ঘায়িত না করাই ভালো৷”

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com